আঁকা - কল্যাণী রমা

লবঙ্গ, এলাচ, দারচিনি

- কল্যাণী রমা

পুঁটিমাছের চ্যাপা শুঁটকি

আমার দিদার বাড়ি সরিষাবাড়ী। ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর জেলায়। দিদার মা'র যখন বিয়ে হয় তখন তার বয়স চার। দিদার বাবার বয়স সাত। পরে যখন ওঁরা বড় হল দিদার বাবার উচ্চতা হল ছয় ফুট আর মা'র উচ্চতা চার ফুট। মনে হয় ওঁদের ভালোবাসা পাহাড়ের ঢাল বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে নামত। দিদার মা'র শ্যামলা গায়ের রং , পা পর্যন্ত চুল। আর দিদার বাবা নাকি সাহেবদের মত দেখতে। খুব ফর্সা রং। মা'রা সবাই তাকে মিষ্টি দাদু বলে ডাকত। তিনি ছিলেন সে এলাকার প্রথম এম বি বি এস ডাক্তার। সেকথা আমার দিদার থেকে গর্ব ভরে আমার দাদুই অবশ্য বেশি বলতো। 'বুঝলি তো তোর দিদা হচ্ছে সম্ভ্ৰান্ত ঘরের মেয়ে। তার বাবা হচ্ছে ডাক্তার আর আমি হ'লাম গ্রামের ছেলে । আমরা চ্যাপা শুঁটকি খাই আর তোর দিদা নাকে কাপড় চাপা দেয়'।

হ্যাঁ , পুড্ডা হচ্ছে আমার দাদুভাই-এর গ্রামের নাম। ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজিলায় সেই গ্রাম। আমি কয়েকবার গেছি। পুকুরপাড়ে বড় মঠ, স্টেশন থেকে তার চূড়া দেখা যায়। মঠের গায়ে ছোট ছোট রঙিন কাচ গেঁথে নানা নকশা করা। এখানে দাদুভাই এর বাড়ির সকলের দাহ করা হয়েছে। দিগন্ত বিস্তৃত ধানক্ষেত দেখে মনে হত আমাদের প্রতিদিনের দৌড়াদৌড়ি করে বছরের পর বছর তেলাপোকার মত টিকে থাকবার চেয়ে এই ধানক্ষেতের আলে চুপচাপ বসে থাকাও অনেক ভালো।

কথায় কথায় কোথায় চলে এলাম। পুড্ডা গ্রাম নয়, সরিষাবাড়ী নয় আজকের এই সকালে আমি আসলে যেতে চেয়েছিলাম নিকলি গ্রামে। আমার দাদুর মামাবাড়ি। নিকলি হচ্ছে হাওর এলাকা। হাওর শব্দটা বুঝি সাগর থেকে এসেছে। বর্ষাকালে গেলে দেখা যায় চারদিকে শুধু জল আর জল । এক বাড়ি থেকে আর এক বাড়িতে প্রায়ই ডিঙি নৌকা করে যেতে হয়। হেঁটে যাওয়ার পথ থাকে না।

শেষ যেবার গিয়েছিলাম, গিয়ে দেখি উঠানে অনেকগুলো ড্রাম এনে রাখা হয়েছে। সেই ড্রাম ভর্তি মাছ। আমি জীবনে কোনোদিন এতো মাছ একসাথে দেখি নি। ওরা মোটা চালের ভাতের সাথে উঁচু করে পুঁটিমাছ ভাজা দিল । ভাতটা মেখে খেতে হয় মাছের পেটের তেল দিয়ে । বাটা মাছ, ট্যাঙরা মাছ, কেঁচকি মাছ, পাবদা মাছ। এমনও হয় নিকলিতে যে অন্য খাবার হয়ত নেই, কিন্তু মাছ আছে। খেয়ে শেষ করা যায় না তা , তখন করা হয় শুঁটকি। আমরাও খেলাম পুঁটি মাছের চ্যাপা শুঁটকি। যত শুঁটকি খেয়েছি এই জীবনে , সবচেয়ে ভালো লেগেছে আমার এই চ্যাপা শুঁটকি। টকটকে লাল রং, অনেক রসুন দেয়া, অসংখ্য কাঁচা মরিচ উঁকি দিচ্ছে - অসম্ভব ঝাল। শুধুই মাছ, কোন সবজি নেই তাতে - একেই বলে চাঁছনি। জিভ থেকে জল পড়তে শুরু ক'রে আমার সেকথা ভাবলেই ।

দিদা তার চুরানব্বই বছরের জীবনে কোনোদিন শুঁটকি খায় নি। কিন্তু আমাদের রাজশাহী বাসায় প্রায়ই রান্না হ'ত চ্যাপা শুঁটকি। কোন রকম টেস্ট না করেই দিদা বাড়ির সকলের জন্য, বিশেষত: দাদুভাই-এর জন্য শুঁটকি রান্না করত দরজা জানালা খুলে - কোন রকম প্রশংসার আশা না করে , সংসারের কাছ থেকে নোবেল প্রাইজ আশা না করে। । দাদুভাই ঠাট্টা ক'রে বলত, "ওই দেখ, তোর দিদা নাকে কাপড় চাপা দিয়ে আবার দুর্গন্ধ রাঁধছে। " আমি ভাবতাম গরম দেশ বলে দরজা, জানালা খুলে এমন শুঁটকি রাঁধা যাচ্ছে। কিন্তু শুঁটকি খেতে ইচ্ছে করলে আমার এই শীতের দেশে আমি কি করব? এদেশে আমিও শুঁটকি রেঁধেছি। কোন ভাড়া বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার আগে।

শেষ যেবার দেশ থেকে ফিরি , ভোর চারটায় বাড়ির সবাই উঠেছে। অমন পাগলপারা অসময়েই আমেরিকার ফ্লাইট। মা বলল, ' ফ্রীজে একটু চ্যাপা শুঁটকি আছে, খাবি?' এসব প্রশ্ন কেউ আবার মানুষকে করে? আমি চারটার সময় চাঁছনির মরিচ ডলে শুঁটকি দিয়ে ভাত মেখে ফেললাম। শুঁটকির ঝালের জন্য নাকি বাড়ির সকলকে ছেড়ে আসব বলে জানিনা - আমার চোখ থেকে ঝর ঝর করে জল ঝরতে থাকলো।

পুঁটিমাছের চ্যাপা শুঁটকি



চীজকেক

মাঝে মাঝে বাড়িতে বাচ্চাদের নিয়ে চীজকেক বানাই আমি। বাচ্চাদের সাথে আর একটু বেশি সময় কাটানোর জন্য - এ দেশে ১৮ বছর হলেই তো ওরা আমার এ পাখির বাসা ছেড়ে চলে যাবে! ওদের মাথার ভিতর স্মৃতির কৌটায় কিভাবে আর একটু বেশি নিজেকে ভরে দিতে পারি - উপচে যে আমার পড়তেই হবে! অবশ্য এই এত কেক বানানো উইস্কনসিনের লম্বা শীতকাল আর আলোহীনতাটুকু কোনভাবে সহ্য করবার জন্যও বটে। আসলে যে কোন পরিবেশেই মানুষকে দমিয়ে রাখা যায় না। মাটি ফুঁড়ে নতুন সুবজ দু'টো পাতা নিয়ে সে বের হবেই - মানুষ যে অমর।

প্রাণের বন্ধু মার্গারেট-এর দেওয়া এই চীজকেকের রেসিপি। গ্রাহাম ক্র্যাকারের বেসের উপর চীজ, তার উপর সাওয়ার ক্রীমের ফ্রস্টিং।

শীতকালের নয়মাস অসহনীয় শীত আর বরফের নিচে চাপা পড়ে থাকলেও আমার এই উইস্কসিনেও স্বর্গ থেকে গরমকাল নেমে আসে। সে গরমকালের তাপমাত্রা দেশের শীতকালের মত। কত ফুল যে ফোটে! ফলের ভারে গাছের ডাল মাটি ছুঁয়ে ফেলে। বাগানে ফুটে ওঠে ন্যাসটারটিয়াম, ভায়োলেট, প্যানসি, গোলাপ। কেমিক্যাল সার না দিয়ে যদি অরগ্যানিক সার দেওয়া যায়, তবে এইসব ফুল দিয়ে সাজানো যায় চীজকেক। আমার বাগানে যেহেতু কোন কেমিস্ট্রি ল্যাবের পটাশ, নাইট্রোজেন আর ফসফরাস নেই তাই এই ফুলগুলো দিয়ে আমি সাজাই চীজকেক। আর একটু গরম পড়লে বাগান আলো করে ফেলে ব্লুবেরী, র‍্যাস্পবেরী, স্ট্রবেরি। বাজার থেকে কিনে আনি কিওয়ি। আমার বাগানে কিওয়ি হয় না। বড় লতানো গাছ। উইস্কনসিনের শীতকালে কিওয়ি বাঁচে না। তবু জীবনের ওই আকাশটা থেকে যতটুকু আলো আমি খাবলে নিতে পারি!

শীতকালে চীজকেক সাজানোর জন্য ফুল পাই না, ফল কিনে আনি বাজার থেকে। আমরা তবু বেঁচে থাকি দাঁত কামড়ে।

ছবিতে আমি আর বাচ্চারা কিওয়ি কেটে তার সবুজ দিকটা দিয়ে চীজকেক সাজিয়েছি। সবুজের ভিতর কালো কালো ছিট ছিট মত। তার সাথে ম্যাচ করে ব্লুবেরী দিয়ে সাদা ফ্রস্টিং ঢেকে দিয়েছি।

তবে একথা ঠিক, কেক বানানোর সময় চামচ থেকে কেকের ব্যাটার  কখনোই চেটে খেতে ভুলে যায়না ওরা। বেক না হওয়া ব্যাটার সব সময়ই বেক হওয়া কেকের থেকে সুস্বাদু।

চীজকেক

চীজকেক

চীজকেক


মাছের চপ

সংসারের লেজে আগুন লেগেছে! তবু দিনের শেষে আমি প্রতিদিন গুটিগুটি ঘরেই ফিরে আসি। ঘরে বাচ্চারা আছে। ঘরে আমাদের কুকুর স্বনামধন্য পপি আছে। লেজ টেজ নেড়ে কোলের ভিতর ঢুকে পড়ে সে। ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’ আমি মাঝে মাঝে খুব গুরুগম্ভীরভাবেই ভাবি যে, এই যে মানুষ এত নিজের মনোভাব প্রকাশে অপারগ, তার প্রধান কারণ হচ্ছে মানুষের লেজ নেই।

এ বছর অক্টোবর মাস থেকেই শুরু হয়েছে আমাদের এই উইস্কনসিনে বরফ পড়া। ‘আল্লায় যারে দেয়, তারে ছাপ্পড় পাইর‍্যা দেয়’! কিন্তু আমি দমবার পাত্র নই। বাইরে হাঁটু পর্যন্ত বরফ তো কী হয়েছে, ঘরের ভিতর তো সী বীচ! স্বল্পদৈর্ঘ্য ছায়াছবির মত নাতিদীর্ঘ পোশাক আশাক পড়েই ঘোরাফেরা করা যাচ্ছে। বেলচা মেরে বরফ পরিষ্কার না করে খাওয়া যাচ্ছে কাঁটা চামচ দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে চপ কাটলেট। আমার বাচ্চাদের একটা ভীষণ প্রিয় খাবার হচ্ছে মাছের চপ। বাইরে বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ শুনতে শুনতে ওদের জন্য তাই চপ বানাতে বসলাম।

এদেশে আসবার পর আসা যাওয়া মিলিয়ে ছয় ঘন্টা ড্রাইভ করে শিকাগো থেকে রুই আর ইলিশ মাছ কিনে এনেছি আমরা অনেক, অনেক বার। সেই ইলিশমাছ সরষে বাটা দিয়ে মেখে, ফ্রোজেন কলাপাতায় মুড়ে পাতুড়ি করেছি - চারজনে মিলে ষোল পিস মাছ খেয়ে ফেলেছি। এই লিমেরিকের যুগেও মহাকাব্য লিখবার মত ধৈর্য নিয়ে রুইমাছের কাঁটা বেছে মাছের চপ করেছি দেশের মত ক’রে। কিন্তু তারপর একসময় এইসব দেশী মাছ কিনবার সলিল সমাধি হ’ল। দেখা গেল শিকাগোর বাংলাদেশী মাছের দোকান ফিশ কর্ণার থেকে যে ইলিশ মাছ কিনে এনেছি, তার ভিতর ওজন বাড়ানোর জন্য সীসার পাইপ। দোকানদার যত্ন ক’রে যন্ত্র দিয়ে মাছের পিসের সাথে সাথে সীসার পাইপও কেটে দিয়েছে। বাঙালীর বুদ্ধি! দোজখের আগুনের ভয়েও তাদের সে বুদ্ধি নেভে না, নেভে না।

ঠিক করলাম, নাহ্‌ অনেক হয়েছে। আর বাংলাদেশী দোকানের মাছ নয়। কিন্তু বাচ্চাদের প্রিয় মাছের চপ?

আমার প্রাণের বাঙ্গালী বন্ধুরা এখানে ওভেনের ভিতর ফুলবড়ি বানিয়ে ফেলে! সবাই তারা মৌসুমী দত্তরায়! ত্রিশ বছর আগে দেশ থেকে আসবার সময় দুই সুটকেসে ক’রে আর কিছু আনতে পারুক না পারুক, নিয়ে আসতে ভোলে নি তারা নিজেদের তীক্ষ্ণ বুদ্ধি। একাই জুতো সেলাই থেকে চন্ডিপাঠ ক’রা মানুষ সব। যে কোন অবস্থায় একটা কিছু দুরবস্থাকে সুব্যবস্থা ক’রে ফেলতে পি এইচ ডি। এস্পারাগাস দিয়ে বানিয়ে ফেলে যখন তখন লতি শুঁটকি!

আমেরিকার সুপার মার্কেটের র‍্যাকে সারি সারি সাজানো টুনা মাছের টিন - স্প্রীং ওয়াটার নামক বসন্তের বাতাসে প্যাক করা 'চিকেন অফ দ্য সী'! আমেরিকানরা তাতে সেলারি কুচি দিয়ে বানিয়ে ফেলে টুনা সালাদ। সালাদ মুখে রোচে না। বাঙ্গালী প্রেমে-অপ্রেমে কেঁদেকেটে যেভাবে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে, সেই একইভাবে সবকিছুকে সে শুধু তেলে ঝোলে। টিনের মুখ কেটে টেনেটুনে টুনামাছ বের করে তাতে আদাকুচি, কাঁচা মরিচ, ভাজা পিঁয়াজ, আলু, ধনেপাতা মিশিয়ে সুতরাং সে বানিয়ে ফেলল টুনামাছের চপ। ডিমে চুবিয়ে, ব্রেড-ক্রাম্বস মাখিয়ে তারপর তাকে ডুবো তেলে ভেজে ভেজে। ধোপার বাড়ির নাকানি চোবানি আর কী! উদভ্রান্ত শেষ বয়সের প্রেম!

আমার মা যে টুনামাছের চপ বানায় তা গোল গোল। আমি বানাই ওভাল শেপের। দুঃখ এবং জীবনকে টেনে টেনে লম্বা না করতে পারলে আমার শান্তি নেই!

এবার গ্রীষ্মের ছুটিতে যখন পোর্টল্যান্ডে আমার বোনের বাড়ি গিয়েছিলাম, মা ছিল। আমাদের জন্য অনেক টুনা চপ বানালো। চিনুক বাতাসে সব ছানাপোনা চিনুক, চপ খেতে চিনুক! অনেক সাথে বেঁধেও দিল। না বেঁধে
দিয়েই বা উপায় কী? এরা সব চাল-কলা ব্রাহ্মণ! পূজারী চক্কোত্তি!

এখন রাত দেড়টা বাজে। মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে উঠে চপের ঢপ লিখছি। কম্ফোর্টারের ভিতর সেঁধিয়ে, শুয়ে শুয়ে, সেল ফোনে, জি মেইলের পৃষ্ঠায়, রিদ্মিক কী বোর্ডে। ঘরের আলো নেভানো, মোবাইলের নূরানি নীল আলো আমার চোখে, মুখে। ভৌতিক, রোমান্টিক আবহাওয়া। জেগে জীবিত অবস্থায় যখন মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে কিছু লিখি, জোর করেই পৃষ্ঠা গুনে তার দৈর্ঘ্য করি দু' পৃষ্ঠা। ফেসবুকের এ যুগে তার বেশি এটেনশ্যান স্প্যান কোন চল্লিশ বছরের শিশুরও নেই। কিন্তু এখন প্রেমপত্রের বদলে মাঝরাতে জি মেলে রেসিপি নয়, চপের গল্প লিখছি - 'সে অনেক, অনেক দিন আগের কথা। আরবের লোকেরা তখন খারাপ কাজ করিত। টুনা মাছের চপ ভাজিয়া খাইত'। তাই স্ক্রল ক'রে ক'রে লেখাটা উপর নীচ ক'রে ঠিক বুঝতে পারছি না দৈর্ঘে তা কত বড় হ'ল। উইস্কনসিনে এখন বসন্তকাল! চপের গল্প তবে নাহয় স্বল্প দীর্ঘ-ই থাক!

মাছের চপ

মাছের চপ

মাছের চপ


ছিটা রুটি

শীতের দুপুর। পাশের বাড়ির কেয়াদের বাসা থেকে খেয়ে এসেছি লালশাকের সাথে দেওয়া চিংড়িমাছ। এমনিতেই লালশাক আমার খুব প্রিয়। খেলেই হাত কেমন লাল হয়ে যায়! জীবনের ভিতর লুকিয়ে থাকা আনন্দের মত। সব ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে। দিদাকে এসে এই আশ্বর্য খাবারের কথা বললাম। দিদা বলল, ‘হুঁম’। বুঝতে পারলাম আমাদের বাড়ি কোনদিন চিংড়িমাছ দিয়ে, পিঁয়াজ দিয়ে, লালশাক রান্না হবে না। যেমন কোনদিন আমাদের বাড়িতে রান্না হয়নি আমার খুব প্রিয় লাচ্ছা সেমাই, জর্দা সেমাই, দুধ সেমাই, কমলালেবু দেওয়া জর্দা পোলাও, কোন ধরনের কাবাব কিংবা টুকরো টুকরো ক’রে কাটা খাসির মাংস দিয়ে বুটের ডাল। অবশ্য খুব রান্না হয়েছে কিশমিস দেওয়া পায়েস, নারকেল দিয়ে ছোলার ডাল- এমন কি পুঁইশাক বা মিষ্টি কুমড়া দিয়ে চিংড়ি মাছ। দুইশ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে পাশাপাশি বাড়িতে থেকেও বাঙালি মুসলিম এবং হিন্দু বাড়ির রান্নাগুলো সম্পূর্ণ আলাদা।

আলাদা ওদের খাওয়ার ধরণও। হিন্দু বাড়িতে এঁটো-কাঁটার ছোঁওয়া বড় বেশি। আজকাল সবাই টেবিলে বসে একসাথে খাওয়ার চল হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ হিন্দু বাড়িতেই আগে খাবার বেড়ে দিত পরিবেশনকারী – মা, ঠাকুমা কিংবা দিদা। সকলের পরে খেত ওঁরা। খুবই সতর্ক থাকত সবাই যেন খেতে বসে কোনকিছুতে বাম হাতের ছোঁওয়া না লাগে। এঁটো ডানহাত দিয়ে ওরা কখনো কোন হাতা বা তরকারির বাসনও ছুঁয়ে দিত না। এখনো মনে আছে ছেলেবেলায় আমি গ্রামের বাড়িতে বাম হাত দিয়ে তরকারির বাসন ছুঁয়ে দিয়েছিয়াম আর ওরা বাসন ধরে সব তরকারি ফেলে দিয়েছিল।

মুসলিম বাড়িতে এসব উপদ্রব নেই । খেতে বসে এঁটো ডান হাত দিয়ে তরকারির বাসন বা হাতা ধরলে কিছুই যায় আসে না ওঁদের । আসলেই তো কী বা যায় আসে?
যদি মাটিতে মাদুরে বসে খাওয়া হয় তবে চিরকাল দেখেছি হিন্দুরা এঁটোকাঁটা বাঁচিয়ে থালা বাটি সব মাটিতে রাখবে, মরে গেলেও মাদুরের উপর নয়। মুসলিমরা সেখানে মাদুরের উপরেই থালা রাখে – ওদের ছুৎ মার্গ নেই । ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শুনেছি অনেক হিন্দু মুসলিম নাম নিয়ে যখন গ্রামে পালিয়ে গিয়েছিল, গ্রামের লোক ওরা যে হিন্দু তা বুঝে ফেলেছিল ওদের মাদুরের উপর থালা না রেখে খাওয়া দেখেই।

যাহোক এসব নিয়ে বেশি কথা বললে রায়ট লেগে যেতে পারে। ভিতরে ভিতরে এতটাই অসহিষ্ণু আমরা! হিন্দু মুসলিম আজও খাওয়া দাওয়ার চরম সাতন্ত্র্য বজায় রেখে পাশাপাশি থাকে। যে যার খাওয়া দাওয়ার বৈচিত্র নিয়ে, কেউ রান্নায় অনেকটা পিঁয়াজ-রসুন দিয়ে আর কেউ একেবারেই না দিয়ে।

আর তাই ২০১৬ সালে যখন বাংলাদেশে গেলাম আর আমার ছোটমাসী মণিমা বলল, ‘কি রে ছিটারুটি খাবি? শাহানা খুব ভালো বানায়’, আমি তো আপ্লুত হ’য়ে গেলাম। ছিটারুটি মনে হ’য় পুরোপুরিই মুসলিম গ্রামের রান্না ।
আগে আমাদের বাড়ি দিনের বেলা কাজের জন্য মুসলিম মেয়েরা থেকেছে। কিন্তু রাতদিনের জন্য থেকেছে ললিতা, সরস্বতী কিংবা লক্ষ্মী। শাহানাই কি প্রথম যে রাতদিন থাকছে? মণিমার চাকরির জন্যই বাড়িতে কাজ করবার মানুষের জন্য আলাদা ঘর আছে, সে ঘরে টিভি আছে, ঘরের সামনে বারান্দা আছে, বাথরুম আছে, সত্যিকারের বিছানা আছে। সবসময় দেখেছি বাড়িতে যারা কাজ করে তারা দিনের শেষে মাটিতে বিছানা ক’রে মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমায়, রান্নাঘরে আলাদা বসে চুপচাপ খায়।

শাহানা খুব অল্প বয়সে বিয়ে ক’রে। তিন ছেলেমেয়ে হ’য়। তাদের রেখে স্বামী মারা যায়। তারপর শাহানা পছন্দ ক’রে আবার বিয়ে ক’রে। একবার কেউ আমাকে বলেছিলো খুব নিম্নবিত্ত আর উচ্চবিত্তদের মাঝে অনেকগুলো বিয়ে দেখা যায়। ওরা বেশ নিজেদের পছন্দমত চলতে পারে । মধ্যবিত্তরাই শুধু ধুঁকে ধুঁকে মরে। ওদের লেপ তোষক, ওদের লোকলজ্জা, ওদের সবাই কী বলবে নিয়ে। আমি মনে ক’রি কথাটা সত্য। কিন্তু সমাজ টিকিয়ে রাখবার দায়িত্ব কেউ আসলে মধ্যবিত্তকে দেয় নি। দেয়নি একটু একটু ক’রে শেষ হ’য়ে যাওয়ার পথটুকু।

আমি সবসময়ই যে কথা বলতে চাই তা বাদ দিয়ে অন্য অনেক কিছু নিয়ে বলে ফেলি - সমাজ সংস্কার, এঁটো কাঁটা, জীবনের আবর্জনা। বকরি ঈদের বিরিয়ানি কিংবা পূজার লাবড়া খাওয়ার সময়ও ।

শাহানা ছিটারুটি বানালো। এমন কিছু আমি কোনদিন খাই নি । চালের গুঁড়া দিয়ে কড়াই-এ আঙুল দিয়ে ছিটিয়ে ছিটিয়ে তৈরি করল ও রুটি । মণিমা বলল ছিটারুটি খেতে হ’য় পিঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, সরষের তেল দিয়ে ডলে; কিংবা খুব কষানো খাসির মাংস দিয়ে। আমি অমৃত খেলাম!

ছিটা রুটি , পিঁয়াজ, কাঁচা মরিচ  সরষের তেল


ছিটা রুটি  কষানো খাসির মাংস


'ফ্ল্যাক্স-সীড’ লুচি

কোন ধরণের রাঁধুনি না হয়েও গত কিছুদিন ধরে নানা রকমের রান্নাবান্না নিয়ে লিখে ফেলেছি আমি। প্রচুর ‘লাইক’ এবং ‘লাভ’ রিয়াকশন ফেসবুকে । কিছুদিন আগেই তো। আমার তামিল, আইয়্যার ব্রাহ্মণ প্রাণের বন্ধু ভিজি নারায়নন ফেসবুকে আমার রন্ধনশৈলীর দারুণ উৎপাত দেখে ভালোবেসে তো বলেই ফেলল, “ইউ আর এ গ্রেট শেফ, কাজু!” বেচারা বোঝেনি ওগুলো মাছের চপ ছিল!

আমি আসলে রান্নাবান্না করি প্রধানতঃ লোকজনকে নিমন্ত্রণ করলে কিংবা ফেসবুকে রান্নার ছবি আপলোড করবার থাকলে। প্রতিদিনের ডাল, চচ্চড়ি রাঁধায় আমার বড়ই অভক্তি। মঞ্চে যেসব শিল্পী গান করেন তারা কি ঘুম থেকে উঠেই বেসুরে বাথরুমে সুর ভাজেন? ওইসব গড়ের মাঠ আনাড়িদের জন্য খোলা। তবে এত এত প্রশংসা সামলানোও বড় মুশকিল। সকলের মন জয় করে যুতসই এক একটা উত্তর তো দিতে হবে? শুধু নিজের বন্ধুদের নয়। বন্ধুদের বন্ধুদেরও। তারা হয়ত অনেক কষ্ট করে ফেসবুকে কাউকে মুগ্ধ করছিল । আমার বেফাঁস উত্তরে তাদের মাঝবয়সের প্রেম ভেঙে না যায়!

“ফেসবুকের বন্ধু” – এ আজকাল বন্ধুত্বের এক নতুন মাত্রা । এবার দেশ থেকে যখন ফিরলাম, প্রিয় বন্ধু সুস্মিকে দেখাচ্ছি দেশের ছবি। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের মাঝে মধ্যমণি হ’য়ে আমি। আমার ক্লাশ টু থেকে বন্ধু সুস্মি আমার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে আমার থেকেও ভালো চেনে। অথচ ও বলল, ‘এরা কারা?’ ‘কেন, আমার ফেসবুকের বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন’! এদিকে বাড়ির লোকজনও খুব স্মার্ট হয়ে গেছে, যুগের হাওয়াটা ধরতে পেরেছে। কিভাবে বন্ধুত্ব, কোথায় পরিচয় একেবারেই জিজ্ঞাসা না করে সকলকে তারা দুপুরে, রাতে ফার্মের মুরগির ঝোল-ভাত খাইয়ে দিয়েছে। সাথে লেবুর আচার। তবু ব্যাকডেটেড সুস্মিটা শুধু বিপুল জনপ্রিয়তা দেখে বলে উঠল, ‘সামনের বছর ইলেকশনে দাঁড়াস’!

আজ বাইরে রোদ নেই। উইস্কনসিনে শীতকালে বেশিরভাগ সময়ই থাকে না। ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু’র গ্রেট কোট পরা আকাশ। কিন্তু আজ গত শনিবার দুপুরের কথা লিখব। সেদিন-
‘অনেক কমলা রঙের রোদ ছিল,
অনেক কাকাতুয়া পায়রা ছিল,
মেহগনির ছায়াঘন পল্লব ছিল অনেক;
অনেক কমলা রঙের রোদ ছিল;
অনেক কমলা রঙের রোদ;
আর তুমি ছিলে;’
নাহ্‌, ফুলস্টপ, ব্রেক, দাড়ি, কমা সব । একেবারেই এরপর নিজের গন্ধ, স্পর্শহীন জীবনের হাহাকার নয় আর ।
মনে আছে কুমার শানু লুক এলাইকের কথা? এক কদম, এক কদম ফেলে মঞ্চে উঠছেন । দু’ হাত ‘তালি থামান, তালি থামান’ ভঙ্গিতে আকাশে তোলা। অথচ কেউ কিন্তু তালি দিচ্ছে না। বরং কিছুটা বিরক্তই। একইভাবে আমিও মঞ্চে উঠে আসছি। ‘ফ্ল্যাক্স-সীড’ লুচির গল্প বলব।

আমাদের কুকুর ‘পপি’ উদাস নয়নে জানালা দিয়ে বাইরের রোদ দেখছে। আর আমি ছুটির দিন শনিবারে দুপুরের খাওয়ার টেবিল ফ্ল্যাক্স-সীড লুচি, আলুর দমে ভরে দিচ্ছি। ময়দার সাথে খানিকটা আটা মিশিয়েছি। ঘি নয়, লুচি তেলে ভেজেছি। মাঝে মাঝে ভালোবাসা তো উথলে উঠেই। নিয়ম ভেঙে বাইরের লোকজনকে নিমন্ত্রণ না করেও শুধু ঘরের মানুষজনদের জন্য রান্না করতে, চূলার পাশে তখন অ্যালু ভেরা নিয়ে চলে যাই। টবে অ্যালু ভেরা লাগিয়েছি আমি। ছ্যাকা খেলেই অ্যালু ভেরার রস ডলে দেই চামড়ায়। আহা রে সত্যিকারের জীবনেও যদি অ্যালু ভেরা থাকত কোন। পুড়ে গিয়ে বেদনায় মলম লাগানো যেত।

আসলে এটা আমাদের আবিষ্কার। লুচিতে ফ্ল্যাক্স-সীড দিলে লুচি ফোলে ভালো। স্বাস্থ্যর জন্যও উপকারী। ফ্ল্যাক্স-সীড ব্লাড প্রেসার কমায়। ব্লাড সুগারের লেভেল কমায় । মনের অসুখের কোন প্রিকশন নেই পৃথিবীতে, ভুড়ি কমানোর অনেক প্রিকশন আছে, শরীরে অসুখ যেন না হ’য় তার প্রিকশন আছে। ঘুম ভেঙে উঠেই চিরতার জল খাওয়া আছে।

লুচির ময়দায় অল্প লেবু চিপে দিলেও লুচি ফুলে ওঠে। জীবনটাকে পূর্ণতায় ফুলিয়ে তুলতে হ’লে অল্পস্বল্প অম্লতা তো চাই-ই চাই। বিশ্বাস না হয় করে দেখ। না হলে জানিও। লিখে জানাতে হবে কিন্তু। ‘অসির চেয়ে মসী বড়।’
একটি মেয়ে। বাচ্চা হবে। বরের সাথে গ্রোসারি করতে গেছে। মা হওয়ার সময় কত কিছুই তো খেতে ইচ্ছে করে। ফুলকো লুচি; কিসমিস্ দেওয়া তবুও ঝাল ঝাল আলুর দম; বড়ই- এর আচার; কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা দিয়ে চালতা মাখা; মচমচ ক’রে টোস্ট বিস্কুট...মেয়েটি বলল, ‘এই যে শোনো, খুব আনারস খেতে ইচ্ছে করছে।’ পয়সার কোনই অভাব নেই ওদের। চার চারটা গাড়ি। ছয় হাজার স্কয়ার ফুটের বাড়ি। তবু বরটি বলল, ‘আনারসের খুব দাম।’

আর একটি ছেলে ছিল। বিয়ের পঁচিশ বছর কেটে গেছে। ওরা আলাদা ঘরেই ঘুমায় গত কুড়ি বছর ধরে। অথচ কথা তো ছিলই কোনদিন তৃষ্ণা মিটবে না ওদের? একসাথে পড়বে কবিতা,
“জীবন গিয়েছে চ’লে আমাদের কুড়ি-কুড়ি বছরের পার—
তখন আবার যদি দেখা হয় তোমার আমার...
সোনালি-সোনালি চিল— শিশির শিকার ক’রে নিয়ে গেছে তারে—
কুড়ি বছরের পরে সেই কুয়াশায় পাই যদি হঠাৎ তোমারে!”
আসলে বিয়ের পর পাঁচটা বছর বিয়েটা ঠিকই ছিল।
“বিবাহিত জীবনের সাধ
কোথাও রাখে নি কোনো খাদ,
সময়ের উর্দ্ধতনে উঠে এসে বধূ
মধু – আর মননের মধু
দিয়েছে জানিতে;”
কিন্তু পাঁচটি বছর কেটে যেতেই একা একা শুধু দড়িতে কাপড় শুকানো আর বাজারের থলি হাতে মাছ কিনতে যাওয়া!

অবশ্য তা সে দু’জন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ নাক ডাকাডাকির অজুহাত দেখিয়ে যদি আলাদা আলাদা ঘরে ঘুমায়, তা নিয়ে বলবার তো কিছু নেই। কিন্তু যখন তারা কুড়িটা বছর ধরে দুপুরে বা রাতে একসাথে খেতে বসে না, তখন সে গল্প আমার বুকে বড় বাজে। দু’জন মানুষ কষ্ট ক’রে একসাথে রাঁধবে, তারপর দু’জন দু’জনের রান্নার প্রশংসা করতে করতে একসাথে খাবে, এই তো মমতার ছবি! প্রস্তর যুগেও তো মানুষ দিনের শেষে একসাথে বসে খেত! মানুষ অদ্ভুত প্রাণী। তার ভালোবাসা সমুদ্রে শুকিয়ে যায়, খানা খন্দে বেঁচে থাকে। তাই এই বউটিও আবার কিন্তু নিজের চব্বিশ বছরের মেয়েকে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়!

ডিজনিতে গেছে একটি পরিবার সাত সাতবার। তবু তাদের বউটি পিছনে পিছনে টুক টুক ক’রে একা একা এগিয়ে চলে। বরটি সামনে সামনে বিশ্বজয়ে।
‘আমার এ পথ তোমার পথের থেকে অনেক দূরে গেছে বেঁকে, গেছে বেঁকে...
সাথিহারার গোপন ব্যথা বলব যারে সেজন কোথা--
পথিকরা যায় আপন-মনে, আমারে যায় পিছু রেখে॥'

আমাদের কুকুর পপি হচ্ছে বর্ডার কলি পাপ। ছয় মাস বয়স। পৃথিবীর সবচেয়ে দৌড়বাজ কুকুরদের মধ্যে একজন হচ্ছে বর্ডার কলি ব্রীড। তবে বর্ডার কলি পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান কুকুরও বটে! তাই যখন রাস্তায় ওর সাথে হাঁটতে বের হই; ও এক পা যায়, দু’ পা আমার জন্য থামে। ও কখনো আমাকে ফেলে সামনে চলে যায় না। যাবে কেন? আমরা তো একসাথে বের হয়েছি। পপি এক ঘরে আর আমি অন্য ঘরে হয়ত আছি। ও করিডোরের ফাঁক দিয়ে, দরজার ফাঁক দিয়ে আমার দিকে মুখ করে রাখে। প্রতি মুহুর্তে যেন ও আমায় ‘চোখে না হারায়’।

এ লেখাটা লিখছি ফুড পোর্টালের জন্য। সেখানে যদিও জানি না কেন শুধু খাবার দাবারের ছবি ছাপে। অসীম শক্তিধর এডমিনরা কিছু খেয়ে মানুষের মুখের তৃপ্তির হাসিটুকু কেটে দেয় – মানুষের কোন ছবি ছাপে না ওরা। কী জানি তারা আমার উদাসী পপির ছবিও কেটে দেবে কিনা! কিন্তু কোন এক শনিবারের ছুটির দুপুরে ছোট্ট এক কুকুরছানা জানালা দিয়ে বাইরের রোদ দেখছে আর খাওয়ার টেবিলের শূন্য বাটি লুচিতে ভরে যাচ্ছে – এর চেয়ে ভালোবাসার ছবি আর কী হতে পারে? তা হোকই না কেন সে স্বাস্থ্যকর ফ্ল্যাক্স-সীড লুচি!

ডগ-ফুড খেয়েও খুব মনুষত্ব হয়েছে আমাদের পপির। ও পথ চেয়ে বসে থাকতে শিখেছে। ও অপেক্ষা ক'রে ! যখনই কিছু খাই পলক না ফেলে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। 'রান্নাটা কেমন হয়েছে?’


উদাসী পপি


শূন্য বাটি


ফুলকো লুচি


শূন্য প্লেট ভরে যাচ্ছে লুচিতে


আলুর দম

মন্তব্যসমূহ



কল্যাণী রমা-র জন্ম ঢাকায়। ছেলেবেলা কেটেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ভারতের খড়গপুর আই আই টি থেকে ইলেকট্রনিক্স এ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল কমুনিকেশন ইঞ্জিনীয়ারিং-এ বি টেক করেছেন । এখন আমেরিকার উইস্কনসিনে থাকেন। অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সিনিয়র ইঞ্জিনীয়ার হিসাবে কাজ করছেন ম্যাডিসনে।
প্রকাশিত বইঃ
আমার ঘরোয়া গল্প;
হাতের পাতায় গল্পগুলো – ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা;
রাত বৃষ্টি বুনোহাঁস – অ্যান সেক্সটন, সিলভিয়া প্লাথ, মেরি অলিভারের কবিতা;
মরণ হ’তে জাগি – হেনরিক ইবসেনের নাটক;
রেশমগুটি;
জলরঙ;
দমবন্ধ।