আঁকা - কল্যাণী রমা

ওড়াওড়ির গল্প


[সুস্মিতা আনোয়ার-কে]


ছবি ১ 

টেলিফোন বাজছে।

“কি বললি? টাপ্পু পটি ট্রেইনড হয়ে গেছে? বাহ্ বা, আড়াই বছর বয়সে পটি ট্রেইনড হয়ে গেল?

এতো একটা বিরাট মাইলস্টোন রে!

ডিজনির টিকিট কেটে ফেল্। পটি ট্রেইনড হয়ে গেলে সব সময় বাচ্চাদের ডিজনি নিয়ে গিয়ে ‘টিঙ্কার বেল’-কে দেখিয়ে আনতে হয়।

আমার গাপ্পু-টার অবশ্য দারুণ দুরাবস্থা! চার বছর বয়স হ’ল! এখনো ডায়াপার বদলে চলেছি! পাশের বাসার হাইডি অবশ্য বলেছে, ‘Oh, don’t worry so much, Anondo! He is not going to go to Harvard like that!’

কি করব বল, আমি আমার কুকুর দু’টোর সাথেই এখন ওকে মাঠে ছেড়ে দিয়েছি! সামারটাতে মাঠে ঘুরেটুরে কুকুরগুলোকে দেখে যদি কিছু শেখে! কয়দিন পরই তো আবার বরফ পড়তে শুরু করবে। তার আগে যদি কিছু ট্রেনিং হয়।

সত্যি একেবারে পাগল হয়ে গেলাম! দু’টো বাচ্চা এত্ত পিঠাপিঠি! একটা বুকে ঝুলছে, অন্যটা কাঁধে! আর আমি সারা দিন অরগ্যানিক এ্যাপল্ আর ক্যারট পিউরি করেই যেন চলেছি।

কি বললি? নাহ্ এখনো জল মিশাই নি তো কিছুতে! ব্রেস্ট মিল্ক পাম্প করেই তো ইউজ করছি সব কিছুতে। ‘Cooking for babies and toddlers’ বইতে কয়েকটা ভালো রেসিপি পেয়েছি, জানিস্!

‘Peek-A-Boo!’

উফ্ আবার কোথায় লুকালো? আই শোন্, পরে কথা বলব বুঝলি। এখন পিসটাকে খুঁজতে হবে রে। ভালো থাকিস তোরা...”


ছবি ২ 
“খুবই ছোট একটা বাথরুম। অশ্রু, মা, আমি সবাই গাদাগাদি করে লুকিয়ে আছি। বাবা একটা শাবল হাতে নিয়ে বাথরুমের সামনে বসবার ঘরটায় বিছানার নীচে।”

বিছানাটা দিয়ে বাথরুমের দরজা আটকানো। যদি সত্যিই পাকসেনা ঢুকে পড়ে, বাবাকে না মেরে মা, আনন্দ কিংবা অশ্রুকে ছুঁতে পারবে না কেউ।

দরজার বাইরে সারারাত কিসের যে শব্দ। খসখস, খসখস। অপেক্ষার শব্দ অমনও হয় নাকি?

“এত উত্তেজনায় অশ্রু একবার ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলে। মা ভয়ে এমন জোরে ওর মুখ চেপে ধরে যে এক বছরের বাচ্চাটার দমই বুঝি বন্ধ হয়ে যাবে!

২৫শে মার্চ রাত। পরদিন সকালে উঠে দেখি সারা বারান্দা জুড়ে বুটের ছাপ। কেন যে ওরা দরজা ভেঙ্গে ঢুকলো না কেউ বুঝতে পারল না।”

কিন্তু মরণ জীবনকে শুধু একবারই ছেড়ে দেয়!

তাই আর কোন পিছনে ফিরে তাকানো নয়। হায়নার মুখ ফসকে হরিণ যেভাবে পালায় ঠিক সেভাবেই দৌড়াচ্ছে সবাই। দিকশূন্যহীন। জঙ্গলের নিয়ম চারদিকে।

পালাতে হবে দেশ ছেড়ে। বাবা শুধু চেক চেক একটা লুঙ্গি আর গেঞ্জি পড়ে। মা এক কাপড়ে। পেটিকোটের দড়িতে থলি করে বিয়ের গয়নাগাটি বাঁধা।

“আমার বয়স চার, বোন এক বছরের। পিছনে পাকিস্তানিরা বন্দুক নিয়ে দৌড়ে আসছে। আর সব কটা রাজাকার পথ দেখাচ্ছে! মেরে ফেলবে আমাদের।”

গ্রামের বেচারা চাষাভুষা গুলা সব ফসলের মাঠে বেতের কাঁটা বিছিয়ে রেখেছে। কি করবে তা না হলে?

কোথাও কোন মাইলস্টোন নেই!

দেশশুদ্ধু লোক ফসল মাড়িয়ে দৌড়াচ্ছে তো শুধু। একটা দেশ স্বাধীন হচ্ছে। ১৯৭১ সাল।

“ইস্, এটাকে দেখতে তো একদম একটা বায়াফ্রার বাচ্চার মত লাগছে। কি সুন্দর ফুটফুটে ‘বসরাই’ গোলাপের মত মেয়ে নিয়ে ফিরলাম ইংল্যান্ড থেকে! মশা, মাছি পর্যন্ত ফুল ভেবে হামলে পড়ছিলো সারা দিন। দেশে ফিরবার পর থেকে দিনের বেলাতেও মশারি টাঙ্গিয়ে রাখছিলাম মাথার উপর! আর এখন দেখো অবস্থা! বার্লি জ্বাল করে করে জল মিশিয়ে জলের থেকেও পাতলা করে খেতে দিচ্ছি। তাও এত্ত ডাইরিয়া!ম্যালনিউট্রিশন হয়ে গেছে তো বাচ্চাটার!”

মার কান্নাকাটি আর মন খারাপ ক্রমশঃ বাড়তেই থাকে।

“ওত চিন্তা করো না তো কমল! কোনমতে বাচ্চাদু’টোকে এখন শুধু বাঁচিয়ে রাখো। দেশ স্বাধীন হলে খাওয়া দাওয়া সব জুটবে!” সেই তো, বাবারা সব সময় এমন আশ্বাস বাণীই তো দেয়!

আশপাশের সকলের চোখ, মুখ একদম ফ্যাঁকাশে ভয়ে শাদা। সব্বাইকে সত্যি মেরে ফেলবে নাকি!

কে একটা দৌড়ে এসে হঠাৎ হাঁপাতে, হাঁপাতে খবর দিল, ‘পালান, আপনেরা হগলতে পালান।পাশের গেরামেই পাকসেনা আইয়্যা পড়ছ্যে!’

“আমি গোয়াল ঘরে গরুর চোখ যে কত সুন্দর হয় দেখছিলাম। ঢাকার ধানমন্ডি বাসায় তো আগে কখনো গরু দেখি নি। আর তা ছাড়া আমার বোধশক্তি চিরকালই মনে হয় কিছুটা কম। মা হ্যাঁচকা টান দিয়ে আমাকে গোয়াল ঘর থেকে টেনে নিয়ে আসলো। আর বাবার কাঁধে পা ঝুলিয়ে চার বছর বয়সে আমি শুধু ভাবলাম, ‘বাহ্, কদমফুল গাছের এই ডালগুলো তো খুব নীচে নেমে এসেছে।’ দুই চারটা কদমফুলই হাত বাড়িয়ে ছিঁড়ে নিয়ে গন্ধ শুকতে, শুকতে সকলের সাথে আমিও দৌড়াতে থাকলাম। দেশ ছেড়ে আগরতলার দিকে।”

বাঁচতে তো হবেই।
নাজি ক্যাম্পে বসে কেউ তো কোনদিন আত্মহত্যা করে না!


ছবি ৩ 
“বসে পড়্, বসে পড়্। ঘাসে বসে পড়্।এই এখনি ফায়ারওর্য়াক শুরু হবে। সিন্ডেরেলার ক্যাসল অলরেডি নীল থেকে বেগুনি হয়ে গেছে।”

ব্যাকগ্রাউন্ডে সিম্ফনি বাজছে।

“চুপ, চুপ। ওই যে জিমিনী ক্রিকেট কথা শুরু করেছে।ওই শোন্ ব্লু ফেয়ারী বলছে, ‘When stars are born they possess a gift or two. They have the power to make a wish come true.’

আকাশের এ মাথা থেকে ও মাথা একটা তারা ছুটে গেল। ছোট, ছোট মেয়েরা গান ধরল,
‘Starlight, star bright, first star I see tonight,
I wish I may I wish I might,
Have the wish I wish tonight…’

সিন্ডেরেলা ক্যাসেলের মাথায় একটা পাঁচকোণা তারা ঝুরঝুর করে ছোট, ছোট আলোর বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ল।”

“ইস্ রে কিভাবে করে এইসব?”

চারদিকে কি হাততালি, কি হাততালি। কালো বাচ্চা, হলুদ বাচ্চা, সোনালি বাচ্চা, খয়েরী বাচ্চা সবাই খিলখিল করে হেসে উঠল।

জিমিনী ক্রিকেট বলে চলেছে, ‘Wishes can come true. And the best part is you’ll never run out. They’re shining deep down inside of you.’

সারা আকাশ ভরে লাল, নীল, সোনালি আলো।

“আরে ওই দিকে হুঁশ করে ওটা কি? উফ্ কোনদিক ছেড়ে কোনদিকে যে তাকাবো, কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।”

“আরে আরে মাথার উপর দেখ। মাথার উপর দেখ। সত্যিকারের মানুষ টিঙ্কার বেল। তার ধরে কেমন শূন্য দিয়ে সিন্ডেরেলার ক্যাসল থেকে টুমরোল্যান্ডে চলে গেল।”

টাপ্পু খুশীতে একটা ‘squeal’ করে মার হাত চেপে ধরে। পাঁচ বছরের বড় তিতলি বলে ফেলে, ‘Oh mom. You are crying! If you like this one so much, you must see Gandalf's Fireworks. He makes the best kind. He makes moving and spiral fireworks. Real ones you know. There will be rockets of birds singing…green trees with trunks of dark smoke…fountains of butterflies flying into the trees…pillars of colored fire that would be turning into eagles…sailing ships…swans…red thunderstorm…a shower of yellow rain…a forest of silver spears….a life-like dragon*…Oh you just name it, mom, just name it!’

পাশ থেকে কেউ একটা বলে উঠল, ‘Ah, shh!’

সারা আকাশ জুড়ে সিন্ডেরেলা, এরিয়েল, পিনোকিও...
ততক্ষণে কয়্যার-ও গান ধরেছে -
‘Fate is kind... Fate is kind...
When you wish upon a star...
Anything your heart desires
Will come to you
If your heart is in your dreams
No request is too extreme
When you wish upon a star
As dreamers do
Fate is kind...
Like a boat out of the blue
Fate steps in and sees you through...
Your dreams come true...
When you wished upon a star
Your dreams come true…’
(Lyrics: When You Wish Upon A Star - (From "Pinocchio") / Louis Armstrong)

চারদিকে কি আলো, কি আলো।


ছবি ৪ 
ট্রাক এসে থামে।

“নিয়ে যা, নিয়ে যা। আনন্দাশ্রু-কে নিয়ে যা এখান থেকে। পাশের বাসায় ভুলিয়ে, টুলিয়ে রাখ কোনভাবে।”

“হি, হি, হি...ওই তো আমার বাবার দেওয়া নামের বাহার!আনন্দময়ী আর অশ্রুময়ী। ছোট করে আনন্দ আর অশ্রু। এক সাথে আনন্দাশ্রু! বড় হয়ে স্কুলে নামের বানান লিখতে গিয়ে দু’ একটা পেন্সিল ভেঙ্গে ফেলেছিলাম আমরা দুই বোনই। তবু যখনই বিকাল হ’ত, দু’জনকে তাড়াহুড়া করে দিদা ডাকত, ‘এই যে, আনন্দাশ্রু! দুধ, ভাত খেয়ে যা! দুধ ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে!’ – তখনই সারা বাড়ি সবসময়ই খিলখিল করে হেসে উঠত।”

তবে এখন সেই গরম দুধ ভাত-এর কথা থাক!
একটা লাশ নামছে ট্রাক থেকে।

“উঁকি মেরে দেখি, ‘গলার কাছে অদ্ভুত একটা নীল দাগ।’ ”

“হ্যাঁ, ঘরে গলায় দড়ি দেওয়া অবস্থায়ই তো পাওয়া গেছে। আত্মহত্যা করবার মানুষ তো নয়!”

“গ্রামে মা-কে দেখবে বলে দেশ স্বাধীন হতে না হতেই পড়ি মরি ছুটে ফিরেছে! কেন এমন? কারা করল?”

দড়ি থেকে উত্তরটা শুধু নেমে আসে। প্রশ্নগুলো ঝুলতে থাকে।

“সন্ধ্যা হয়ে আসছে। রংপুরের পাখিবাবুর বারান্দায় বসে আছি পা ছড়িয়ে। পাখিবাবুর মত মানুষকেও নাকি পাকিস্তানিরা মেরে ফেলেছে! চড়ুইপাখির মত বড় সাইজের মশা কামড়াচ্ছে। ঠাস করে মশাটা মেরে হাতের উপরে মশার রক্ত দেখতে, দেখতে জিজ্ঞাসা করি ছোটমাসিকে, ‘আই রতনমা, বাবা কোথায়? কবে আসবে?’ ”

খুব বেশী চারদিকে মশা টশা উড়লেও রংপুরের মফস্বল শহরে তখনও বেশ কিছু বাঁশঝাড় ছিল। পাখিবাবুর বাড়ির পিছনে।

“হাতের কাছে আর কোন সহজ উত্তর না পেয়ে ছোটমাসি ‘বাঁশবাগানের মাথার উপর’ লাফ মেরে উঠে পড়া প্রথম তারাটা দেখিয়েই আমায় তাই বলে ফেলল, ‘জানিস মানুষ মরে গেলে আকাশের তারা হয়ে যায়। এখন থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা হ’লেই তোর বাবাকে দেখতে পাবি।’ ”

“বাহ্, তাই নাকি? শুনেছি বাবাটা আমার পড়াশোনায় নাকি বড় বেশী ভালো ছিল! কিন্তু তাই বলে এত বুদ্ধি! এক্কেবারে আকাশের তারা হয়ে গেল!”

“রংপুরের বাড়িটায় ছিল লাল রঙের মেঝে। কি যে ভালোবাসতাম আমি ওই লাল রঙ। গরাদ দেওয়া জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখতাম, একটা বাচ্চার একটা হাত মা ধরেছে। অন্য হাতটা বাবা। মাটিতে পা-ই ঠেকছে না বাচ্চাটার। বাবা, মা-র হাত ধরে একদম শূন্যে দোল খেতে, খেতে সে চলেছে। আজও এই ছবিটা ভ্যান গগের ‘সানফ্লাওয়ার’ ছবি থেকে আমার বেশী প্রিয়।”

“দিদার ডাকাডাকিতে বিছানার উপর এসে বসি। চিঠি লিখবার সময় হয়ে গেছে। দুপুর আড়াইটা বাজে। দুপুর হ’লেই দিদার কাছে আমি পড়তে বসি। সব অক্ষর তো সেই তিন বছর বয়সেই শিখে বসে আছি। এখন প্র্যাক্টিক্যাল। চিঠি লেখা শিখছি। বাবার জন্য চিঠি লিখে পুরো এক ডানো দুধের লাল, শাদা খালি কৌটাই ভরে ফেলেছি। মন খারাপ আর চিন্তার কি আছে? ঠিকানাটা পাওয়া গেলেই সব পোস্ট করে দেওয়া হবে।”


ছবি ৫ 
“ইস্, কি রকম বানিয়েছে দেখো। ‘টিঙ্কার বেল’ পোশাক! এক্কেবারে যেন রিয়্যাল। কিনে দাও।শিগগির কিনে দাও। সত্যি এই বছর টাইম শেয়ারটায় ডিজনি না আসতে পারলে কি মিস্, কি মিস্ যে হয়ে যেত! লাস্ট ইয়ার এমন দেখিনি।আমারই কি ভীষণ উড়তে ইচ্ছে করছে এখন!”

“দেখি, দেখি তোর ‘পিকসি ডাস্ট’ দেখি। উফ্, কি যে সুন্দর। ঝিলমিলে একদম। উড়িয়ে দে, উড়িয়ে দে বাতাসে। দেখি তো সত্যি উড়তে পারিস্ কিনা!”


ছবি ৬ 
“আমি উড়তে থাকি।”

“আসলে ওড়া কিন্তু একদম কঠিন নয়।যখনই আশে পাশে আর কিছু ভালো লাগে না, তখন শরীরটাকে একটু সামনে ঝুঁকিয়ে পা-র আঙ্গুলগুলোয় অল্প চাপ দিতে হয়। হাত দু’টো দু’পাশে ডানার মত মেলে ধরতে হয়। হ্যাঁ, হ্যাঁ, চোখ বন্ধ। সবসময় সব ভালো কাজে চোখ বন্ধ করতে হয়। ব্যস্, ওই তো। দেখ তো কি সোজা!”

“উড়ছি। ভয়ে। একটা ঘরে গাদাগাদি করে সব লোক চালের বস্তার মত করে রাখা আছে। হাত পিছনে বাঁধা। দাউ, দাউ করে আগুন জ্বলছে সামনে। পাকিস্তানিরা এসে এক, একটা বস্তার মত মানুষ ওই আগুনে ছুঁড়ে দেবে।”

মানুষের স্বপ্ন শেষ হয়। দুঃস্বপ্ন কোনদিন শেষ হয় না...

রাত গভীর হ’তেই পাশের ঘর থেকে দাদুর গলা শোনা যায়।

“কি রে রতন, এই রাত তিনটার সময় বাচ্চা মেয়েটাকে কেন নাচ শিখাচ্ছিস? তাও আবার ‘ঘুমঘোরে এলে মনোহর, নমো, নমো, নমো, নমো!”

“কি করবো, বাবা, ও তো ঘুমাচ্ছে না! দাদাবাবু চলে যাওয়ার পর থেকেই এমন হয়েছে। বাচ্চা একটা মেয়ে। সারারাত চোখ বড়, বড় করে তাকিয়ে আছে!”

আনন্দ তাকিয়ে দেখে মেঝের উপর দিয়ে একটা বড়সড়, পেট মোটা কালো পোকা হেঁটে যাচ্ছে...
“এত্ত ভয় লাগে ওমন কালো পোকা দেখতে আমার! তবু নিজেকে বলি, ‘কোনভাবে যদি গপ্ করে ওই কালো পোকাটা খেয়ে ফেলতে পারি, বাবা নিশ্চয়ই ফিরে আসবে।’
এক পা দুই পা এগিয়েও যাই। তারপর ফিরে আসি।”

ভয় মানুষকে তো আর কোনদিনই মানুষ করে না!

“আমার বাবাও ফিরে আসে না!”

তারপর পড়ে থাকা ছোট, ছোট জীবনগুলোকে বাঁচানো এতটাই জরুরী হয়ে পড়ে যে মরণের কারণ এবং গল্প শুনবার কারো সময় হয় না। সেই বাড়িটায় কোথাও কোনদিন কেউ আর চোখের জল ফেলে না।

এবং শেষ পর্যন্ত আনন্দ নামের একটি চার বছরের মেয়ে পৃথিবীর সব ফলাফলহীন ভালোবাসার জন্য খুব স্বাভাবিকভাবে অপেক্ষা করতে শিখে যায় – একদম নিঃশ্বাস নেওয়ার মত করে। ওর কিছুতেই কোনদিন দম বন্ধ হয়ে আসে না।



* (J.R.R.Tolkien - The Fellowship of the Rings)
(http://once-upon-a-hobbit.blogspot.com/2009/12/in-which-we-talk-about-gandalf-s.html)

মন্তব্যসমূহ



কল্যাণী রমা-র জন্ম ঢাকায়। ছেলেবেলা কেটেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ভারতের খড়গপুর আই আই টি থেকে ইলেকট্রনিক্স এ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল কমুনিকেশন ইঞ্জিনীয়ারিং-এ বি টেক করেছেন । এখন আমেরিকার উইস্কনসিনে থাকেন। অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সিনিয়র ইঞ্জিনীয়ার হিসাবে কাজ করছেন ম্যাডিসনে।
প্রকাশিত বইঃ
আমার ঘরোয়া গল্প;
হাতের পাতায় গল্পগুলো – ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা;
রাত বৃষ্টি বুনোহাঁস – অ্যান সেক্সটন, সিলভিয়া প্লাথ, মেরি অলিভারের কবিতা;
মরণ হ’তে জাগি – হেনরিক ইবসেনের নাটক;
রেশমগুটি;
জলরঙ;
দমবন্ধ।